
যেমন হতো প্রাচীন কালের খতমে বুখারি
অনলাইন ডেস্ক:
পবিত্র কুরআন, হাদিস, ফিকাহ কিংবা যেকোনো বিশেষ কিতাবাদি খতম এবং শিক্ষাবর্ষ সমাপনের পরে প্রাচীন মুসলিম সমাজে অনুষ্ঠান উদযাপনের রীতি আছে। ইমাম শাফেয়ি রহ:-এর বর্ণনা আছে- তার সময়ে ছাত্র কোনো কিতাব শেষ করলে অভিভাবক শিক্ষককে বিশেষ পুরস্কৃত করতেন।
খতিবে বাগদাদি (মৃত্যু : ৪৬৩ হিজরি) লিখেছেন, যখন ইমাম আবু হানিফা রহ:-এর ছেলে হাম্মাদ শিক্ষা সমাপন করল, তখন তিনি ছেলের শিক্ষককে ৫০০ রৌপ্যমুদ্রা উপঢৌকন দেন। ইমাম আহমাদ রহ:-এর ছাত্র আবু বকর আল মারুজি (মৃত্যু : ২৭৫) তার গ্রন্থ ‘আল ওরায়’-এ নিজ উস্তাদের ব্যাপারে লিখেছেন, ছেলের পড়াশোনা শেষ হলে সবাইকে তিনি বাদাম ও আখরোট খাইয়েছিলেন।
প্রখ্যাত তাবেয়ি হাসান বসরি রহ:, যিনি ১১০ হিজরিতে ইন্তেকাল করেছেন-বলেছেন, সাহাবাদের যুগেও কিতাবাদি খতমের পরে খানাপিনার আয়োজন হতো, সন্তান কিতাব শেষ করলে তারা উট জাবাই করত বরং তিনি এটাকে সালাফদের মুস্তাহাব উল্লেখ করেছেন।
হাফেজ ইবনে হাজার রহ: (মৃত্যু : ৮৫২ হিজরি) তার গ্রন্থ দুরারুল কামিনাতে উল্লেখ করেন, জামালুদ্দিন দুরাবি নামে আলেপ্পোর এক ধনী ব্যবসায়ী ছিলেন, যিনি নিয়মিত বুখারি শরিফের দরসে বসতেন এবং খতমের দিন সবাইকে খালআ নামক বিশেষ পোশাক হাদিয়া দিতেন। ইমাম সাখাবি রহ: আদ দাওয়ুল লামিয়িতে লিখেছেন, আলেপ্পোর মামলুক সেনাপ্রদর্শক ইবনুল মুহাজির (মৃত্যু : ৮১৭ হিজরি) বুখারি শরিফের পাঠদান করতেন এবং খতমের দিন তার দরসে উপস্থিত সবাইকে উপঢৌকন দিতেন।
শায়খ আফিফুদ্দিন আল ইয়াফাইয়্যি (মৃত্যু : ৭৬৮ হিজরি) মিরআতুল জিনান গ্রন্থে বলেন, আমি আমার উস্তাদ জামালুদ্দিন আজ জুহাইবি রহ:-এর নিকট ইমাম আবু ইসহাক সিরাজি লিখিত শাফেয়ি মাজহাবের ফিকহের কিতাব আত-তামবিহ পড়ি। খতমের দিন আমার উস্তাদ দুটি দুম্বা কেটে অনেক মানুষের ভোজের আয়োজন করেন।
ঐতিহাসিক মুহিউদ্দিন আল আইদারুস (মৃত্যু : ১০৩৮ হিজরি) তার কিতাব আন নুরুস সাফিরে শায়খ মুহাম্মদ বিন আবুল হাসান আস সিদ্দিকি (মৃত্যু : ৯৯৩ হিজরি)-এর জীবন সম্পর্কে লিখেছেন, তাফসির, হাদিস, ফিকাহসহ যেকোনো কিতাব শেষ হলে ছাত্রদের নিয়ে তিনি বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন। এতে কবি-শিল্পীরা আসত, আল্লাহর শুকরিয়া জানিয়ে শের-কবিতা গাইত। আব্বাসি খলিফা মুতাওয়াক্কিল তার ছেলের শিক্ষাসমাপনীতে শিক্ষককে দামী একটা ট্রে ভরে মণিমুক্তা দিয়েছিলেন, যার মূল্য ছিল পাঁচ হাজার দিনার বা আট লাখ ৩০হাজার মার্কিন ডলার।
এ উপলক্ষে শিক্ষাসমাপনকারী শিক্ষার্থীর ব্যতিক্রমী পোশাক পরিধানের কথাও ইতিহাসে পাওয়া যায়। প্রসিদ্ধ ফকিহ সাবত ইবনুল আজমি (মৃত্যু : ৮৮৪ হিজরি) তার গ্রন্থ ‘কুনুজুজ জাহাব ফি-তারিখি হালাব’-এ উল্লেখ করেছেন, এ জাতীয় অনুষ্ঠানে আবু হানিফা রহ:-এর ছাত্র কাজি আবু ইউসুফ রহ: ব্যতিক্রমী পোশাক পরিধান করেন, যিনি ১৮২ হিজরিতে ইন্তেকাল করেন। তা ছাড়া স্নাতক সমাপনকারীর মূল নামের সাথে বিভিন্ন উপযোগী উপাধি ও লকবের ব্যবহারও ছিল।
একইসাথে মাহফিলের আয়োজন এবং সাজসজ্জা ও বিশেষ ইবাদত-বন্দেগির কথাও পাওয়া যায়। প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আস সাখাবি বলেন, আব্দুল ওয়াহেদ নামের সে সময়ের বড় এক আলেম হাফেজ হলে তার পিতা আল্লাহর শুকরিয়াস্বরূপ মসজিদে বিশেষ মজলিসের আয়োজন করেন। এ উপলক্ষে মসজিদে আলোকসজ্জা করা হয় এবং সারা রাত শুকরিয়ার সালাত আদায় করা হয়। ইতিহাসে এ রকম আরো অসংখ্য ঘটনার উল্লেখ আছে, সেগুলোর কয়েকটি মাত্র আলোচিত হলো।
সূত্র : আলজাজিরা