
অনলাইন ডেস্ক:
রংপুর সিটি করপোরেশনের তৃতীয় মেয়াদের নির্বাচনে ঐতিহাসিক জয়ে বিজয়ী হয়ে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী মোস্তফিজার রহমান মোস্তফা। তিনি তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ৯৬ হাজার ৯০৭ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হলেন। ভোট পড়েছে ৬৬. ৮৮ শতাংশ।
মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) রাত ১২টায় রংপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে ফলাফল ঘোষণা করেন রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো: আবদুল বাতেন। তিনি বেসরকারী ভাবে মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে মেয়র হিসেবে ঘোষণা দেন। তার প্রাপ্ত ভোট এক লাখ ৪৬ হাজার ৭৯৮। তিনি নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ৯৬ হাজার ৯০৭ ভোট বেশি পেয়েছেন।
দ্বিতীয় হয়েছেন ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখা প্রতীকের আমিরুজ্জামান পিয়াল। তিনি পেয়েছেন ৪৯ হাজার ৮৯২ ভোট। তৃতীয় হয়েছেন ৩৩ হাজার ৩৬৬ ভোট পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে হাতি প্রতীকের লতিফুর রহমান মিলন। আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া পেয়েছেন ২২ হাজার ২৩৯ ভোট। এছাড়া বাংলাদেশ কংগ্রেসের ডাব প্রতীকের আবু রায়হার পেয়েছেন ১০ হাজার ৫৪৯ ভোট, জাকের পার্টির গোলাপ ফুল প্রতীকের খোরশেদ আলম খোকন পেয়েছেন পাঁচ হাজার ৮০৯ ভোট, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের মশাল প্রতীকের প্রার্থী পেয়েছেন পাঁচ হাজার ১৩৮ ভোট, খেলাফত মজলিশের দেয়াল ঘড়ি প্রতীকের তৌহিদুর রহমান মণ্ডল রাজু পেয়েছেন দুই হাজার ৮৬৮ ভোট এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মেহেদী হাসান বনি দুই হাজার ৬৭৯ ভোট।
এবার নির্বাচনে বৈধ ভোট পড়েছে দুই লাখ ৭৯ হাজার ৯৩৬টি আর নষ্ট হয়েছে এক হাজার ৩৬টি।
রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবার ভোটার সংখ্যা ছিল চার লাখ ২৬ হাজার ৪৭০ জন। ২২৯টি কেন্দ্রের ১৩৪৯টি কক্ষে ভোটগ্রহণ হয়। বসানো হয় এক হাজার ৮৮৭টি সিসিটিভি ক্যামেরা। ৯ মেয়র প্রার্থী, ১৭৮ জন সাধারণ এবং ৬৭ জন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
২০১৭ সালের ২১ ডিসেম্বরের ভোটে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা ৯৮ হাজার ২৮৭ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছিলেন রংপুর সিটির প্রথম মেয়র নৌকা প্রতীকের মরহুম সরফুদ্দিন আহম্মেদ ঝন্টুকে। সেই নির্বাচনে মোস্তফা পেয়েছিলেন এক লাখ ৫৯ হাজার ৮২৪ ভোট। আর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঝন্টু পেয়েছিলেন ৬১ হাজার ৫৫৭ ভোট। মোস্তফা ঝন্টু ছাড়াও লড়েছিলেন পাঁচজন। তাদের মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে থাকা বিএনপির প্রার্থী কাওছার জামান বাবলা পেয়েছিলেন ৩৪ হাজার ৭৯১ ভোট। চতুর্থ অবস্থানে থাকা ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখা প্রতীকের আমিরুজ্জামান পিয়াল পেয়েছিলেন ২৩ হাজার ৭১৮ ভোট। পঞ্চম হয়েছিলেন জাতীয় পার্টির বিদ্রোহী প্রার্থী হোসেন মকবুল শাহরিরার। তিনি পেয়েছিলেন ২ হাজার ৩০৬ ভোট। এক হাজার ২৪৫ ভোট পেয়ে ৬ষ্ঠ হয়েছিলেন বাসদের মই প্রতীকের আব্দুল কুদ্দুস। আর সপ্তম হয়েছিলেন আম প্রতীকের সেলিম আখতার। তিনি পেয়েছিলেন মাত্র ৮০৭ ভোট।
ফলাফল প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, এই বিজয়ের জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এই বিজয়কে আমি রংপুর মহানগরবাসীর কাছে উৎস্বর্গ করলাম। আপনারা আগের মতো আমার পাশে থাকবেন। আমিও দরজায় পর্দাবিহীনভাবে আপনাদের পাশে থাকবো। দুর্নীতি মুক্ত থেকে নগরবাসীর সেবা করার চেষ্টা করবো, ইনশাআল্লাহ।
তিনি আরো বলেন, ইভিএমএ ভোট ধীর গতিতে এবং বিভিন্ন কেন্দ্রের মেশিনের ক্রুটির কারণে ভোট কম পোলিং হয়েছে। যদি স্বাভাবিকভাবে ভোট হতো এবং কাঙ্ক্ষিত ভোট পোল হতে তাহলে এবার আমি দুই লাখ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হতাম।
নির্ধারিত সময় সাড়ে ৪টায় হলেও অনেককেন্দ্রে ভোট হয়েছে সন্ধার পর পর্যন্ত। একদিকে অনেক কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষিত হয়েছে, আর অনেক কেন্দ্রে চলেছে ভোট। ইভিএমে ভোট ধীর গতিতে হওয়ায় যারা সাড়ে ৪টার আগে কেন্দ্রে প্রবেশ করেছিলেন তাদের ভোট নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত ছিল সাড়ে ৪টার পরও যেসব কেন্দ্রের ভেতরে মানুষ থাকবে সেখানে ভোটগ্রহণ করা হবে।
নির্বাচন বেশ উৎসবমুখর হয়েছে বলে দাবি করে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো: আবদুল বাতেন জানিয়েছেন, ভোট সুষ্ঠু এবং উৎসবমুখর হয়েছে। ইভিএম-এ ভোট কম পোল হওয়ার কারণ ভোটারদের অসেচতনতা। ইভিএম মেশিন কিছু ত্রুটি দেখা দিলেও আমরা সাথে সাথে সেটা ঠিক করেছি। আমরা মক ভোটিংয়ের মাধ্যমে ইভিএমে ভোট শিক্ষণ করেছি। কিন্তু মানুষ আসেনি।
এদিকে সকাল ১০টার দিকে নগরীর লায়নস স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া। অন্যদিকে সকাল সোয়া ৯টার দিকে নগরীর আলমনগর কলেজ রোড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। তিনি ৮টা ৫০ মিনিটে ভোট কক্ষে ঢুকলে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে ত্রুটি দেখা দেয়ায় ভোট না দিতে পেরে ভোট কক্ষ থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরে অবশ্য তিনি ভোট দিতে পেরেছেন।