ইসলাম

গীবত এক মারাত্মক গোনাহের নাম

উম্মে আব্দুল্লাহ্:

পৃথিবীর সবকিছুই যে আপনার ভাল লাগবে এমন কোন কথা নেই। আর পৃথিবীর সব মানুষই যে আপনার প্রিয় হবে এমনও কোন বাধ্য বাধকতা নেই। এমন কি নিজ পরিবার পরিজনের মাঝেও কেউ কেউ হয়তো আপনার অপছন্দ। তাই বলে সেই ব্যক্তির পিছনে তার নিন্দা বা সমালোচনা করা কিন্তু একেবারেই যুক্তিসংগত নয়।

কোন ব্যক্তির পিছনে এমন কোন কথা বলা, যা শুনলে ঐ ব্যক্তি মনে ব্যথা পায় সেটাকে গীবত বলে। আর গীবত মৃত ভাইয়ের গোস্ত খাওয়া হতেও জঘন্য অপরাধ । আমরা সব সময় ভেবে থাকি আমিতো আর মিথ্যা বলছি না, অমুকে যেটা বলে বা করে সেটাইতো বলছি। আসলে এইযে কারো পিছনে তার সত্য দোষ আলোচনা করছি, এটাই গীবত। আর যদি কারো নামে মিথ্যা কিছু বলি সেটাতো তার নামে অপবাদ দেওয়া। গীবত আমাদের কাছে ঘি ভাতের মতই অমৃত। একের অধিক লোক একত্রিত হলেই, বিশেষ করে দু জন মেয়ে মানুষ এক জায়গায় মুখোমুখি হলে শুরু হয়ে যায় এই অশুভ কথার ফুলঝুরি । পর নিন্দা, পরচর্চা ছাড়া আমরা যেন কথা বলতে ই ভুলে গেছি।
অথচ নিজের অজান্তেই আমি আমার অপ্রিয় মানুষটার গুনাহ মাফ করাচ্ছি। এবং তার গুনার বোঝা আমার কাঁধে তুলে নিচ্ছি। হাদীছে আছে, ক্ষুর বা চাকু যেমন মাথার চুলকে পরিস্কার করে গীবত তেমনি নিজের আমাল কে বরবাদ করে।
শুধু তাই নয়, যে ব্যক্তির গীবত করা হয় তার কাছ থেকে ক্ষমা না নেওয়া পর্যন্ত আল্লাহ ও ক্ষমা করবেন না। কারণ এটা বান্দার হকের অন্তর্ভুক্ত ।
এজন্যই পুর্বেকার বুজুর্গানেদ্বীন যদি শুনতেন যে, কেউ তার গীবত করছে তাহলে খুশি হয়ে গীবত করনেওয়ালাকে হাদীয়া পাঠাতেন।
কারন তারা জানতেন, যে তার গীবত করছে সে নিজের অজান্তেই আমার উপকার করছেন।
আজ আমরা এতটা ই গুনাহ করছি যে গুনাহর অনুভূতি ই দিল থেকে হারিয়ে গেছে। এজন্য গীবত যিনা হতে জঘন্য পাপ, যেনেও অহরহ এই কঠিন গুনাহ করে যাচ্ছি নির্দ্বিধায়।
গীবত আবার দুই প্রকার,
#খুচরা গীবত।
# পাইকারি গীবত।
খুচরা গীবতের জন্যতো ব্যক্তি বিশেষের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া সম্ভব।
কিন্তু পাইকারি গীবত থেকে ক্ষমা চাওয়াটা ততোটা সহজ নয়। তা স্বত্তেও এই পাইকারি গীবত করতে আমরা বড্ড আনন্দিত এবং অভ্যস্ত।
উদাহরণ সহকারে বিষয়টি আর একটু স্পষ্ট করলে বুঝতে সুবিধা হবে।
যেমন ধরুন বরিশাইল্লারা জন্মের নিমকহারামি। নোয়াখাইল্লাদের কথা আর বইলেন নাতো। ওগো কাম খাইয়া উইঠ্যা দৌড় দেওয়া। কিংবা কুমিল্লারা হইছে কিপটার ভরা।
এছাড়াও হুজুরগো মতো শয়তান দুইন্নাইতে নাই। এ্যারা শুধু পরের ডা খাইতে জানে, খাওয়াইতে জানে না।
কিংবা হুজুরেরা হইছে আজন্মের লুইচ্চা (নাউজুবিল্লাহ)। অহরহ এরকম হাজারো কথা আমরা বলে থাকি। অথচ একথা জানি না, এমন কথা বলে পুরো পৃথিবীর হুজুরদের গীবত করলাম। পুরা এলাকার মানুষের গীবত করলাম।

এখন কখনো যদি আমার গুনাহের অনুশোচনা হয় তাহলে আমি কয়জনের কাছে ক্ষমা চাইব!
মানুষকে ভালোবাসার চেয়ে কষ্ট দেওয়া সহজ। কাঁদানো যতটা সহজ, ঠিক ততোটাই কঠিন মানুষকে আনন্দ দেওয়া।
মানুষকে ভালোবেসে বুকে টেনে নিতে না পারলেও তাদের সমালোচনা বা গীবত করে নিজের আমল বরবাদ করার মত বোকামী থেকে আমাদের বিরত থাকা প্রত্যেকের জন্য অত্যন্ত জরুরী।
কোন ব্যক্তি যদি কোন মুসলমানের দোষ ত্রুটি ঢেকে রাখে, স্বয়ং আল্লাহ কাল হাসরের কঠিন দিনে তার সমস্ত দোষ গোপন রাখবেন।
হাদীসের মধ্যে আছে,
হুযুর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরমাইয়াছেন, কোন মুসলমান যখন নিন্মের দোয়াটি একবার পড়ে তখন পৃথিবীর সমস্ত নারী পুরুষের সম পরিমান নেকি তার আমল নামায় দিয়ে দেওয়া হয়।
দোয়া ঃ-
আল্লাহুম্মাগফিরলী ওয়ালিল মুু’মিনিনা ওয়াল মু’মিনাত,ওয়াল মুসলিমিনা ওয়াল মুসলিমাত।

এছাড়াও এই দোয়াটি দৈনিক ২৫ অথবা২৭ বার নিয়মিত করলে আল্লাহ তাকে মুজতাযাবুদ দোয়া বানিয়ে দিবেন ইংশআল্লাহ।
আল্লাহ আমাদেকে গীবতের মত এই কঠিন গুনাহ থেকে বাঁচার এবং এই দোয়া নিয়মিত আমলের তৌফিক দান করুন। আমীন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button